অথর্ববেদ সংহিতা

অথর্ববেদ সংহিতা সম্পর্কে আলোচনা করা হল।

অথর্ববেদ সংহিতা

অথর্ববেদের প্রাচীন নাম অথর্বাঙ্গিরসবেদ। অথর্ব এবং অঙ্গিরস এই শব্দ দুটি মিলে অথর্বাঙ্গিরস নামটি নিষ্পন্ন হয়েছে। অথর্ব কথাটির অর্থ ছিল অগ্নিপূজক ঋত্বিক্। এবং সম্ভবত সাধারণ পুরোহিতদেরও প্রাচীন নাম এইরূপই ছিল। কারণ অগ্নি উপাসক কথাটি প্রাচীনতম ইন্দো-ইরানীয় যুগ থেকে চলে এসেছে। জেন্দ আবেস্তা উল্লেখিত উপাসকেরা ভারতীয় অথর্ব পদের সাথে তুলনীয়।

আবার এই অথর্ব পদে যাদু সূত্রকেও বোঝাতো। অঙ্গিরাগন এক শ্রেনীর প্রাগৈতিহাসিক অগ্নি উপাসক এবং এই পদের পরবর্তীকালেও অথর্ব পদের মতো যাদুবিদ্যার সূত্র এইরূপ অর্থের ব‍্যবহার হয়েছে। কিন্তু অথর্ব ও অঙ্গিরস পদ দুটি ভিন্ন প্রকার যাদু সূত্রকে বোঝায়। অথর্ব বলতে পবিত্র যাদুবিদ্যা বোঝায়। অর্থাৎ ভেষজবিদ্যা, শান্তি ও পৌষ্ঠিক প্রভৃতি মাঙ্গলিক ক্রিয়া।

এগুলি মনুষ্য জীবনের সুখ-শান্তি এবং কল্যাণের জন্য ব্যবহার করা হতো। কিন্তু অঙ্গিরস সূত্রগুলি অকল্যাণকর কাজে প্রয়োগ করা হতো। যেমন- শত্রুর অপকার সাধন, মারন, বশীকরণ, উচাটন প্রভৃতি আভিচারিক কর্মের। অতএব, অথর্ববেদ হল প্রধানত দুই প্রকার সূত্রের সমষ্টি। তাই অথর্ববেদ হল অথর্বাঙ্গিরস পদের সংক্ষিপ্ত রস। এছাড়াও অথর্ববেদকে ভৃগ্বঙ্গিরস এবং ব্রহ্মদেবও বলা হয়।

অথর্ববেদ সংহিতা- এর শাখা

অথর্ববেদের দুটি শাখা- i) শৌনক, ii) বৈপল্লাদ।

অথর্ববেদ সংহিতার শৌনক শাখায় ৭৩১ টি সূক্ত আছে এবং ৬ হাজারের বেশি মন্ত্র আছে। সূক্তগুলি ২০টি কান্ডে বিভক্ত। কান্ডগুলি আবার প্রপাঠক এবং অনুবাকে বিভক্ত। ২০টি কান্ডের মধ‍্যে শেষ কান্ড দুটি মূল সংহিতার সাথে যুক্ত ছিলনা। সেই জন‍্য ঐ দুটি কান্ড বাদ দিয়ে ১৮টি কান্ডকে মৌলিক বলে ধরা হয়।

গদ‍্য, পদ‍্য উভয়রূপ মন্ত্র থাকলেও পদ‍্যের আধিক‍্যই বেশি। অথর্ববেদের ভাষা, ছন্দ ঋকবেদ সংহিতার সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ, যদিও বিষয়বস্তু এক নয়।

ভৌগলিক ও কৃষ্টি মূলক বিচারে অথর্ববেদ নিঃসন্দেহে ঋকবেদের পরবর্তী যুগের রচনা। কারণ অথর্ববেদের আর্যগন গাঙ্গেয় প্রদেশে বসতি স্থাপন করেছিলেন।

ঋকবেদে বাংলার বাঘের উল্লেখ নেই, কিন্তু অথর্ব বেদে আছে। রাজার রাজ‍্যাভিষেকের সময় রাজাকে বাঘের চামড়ার উপর বসানো হত। অথর্ববেদে চাতুর্বর্ণ সম্পূর্ণ রূপে আত্মপ্রকাশ করেছে। ব্রাহ্মণেরা চার বর্ণের মধ্যে প্রধান এবং তারা ভূদেব বলে পরিচিত হয়েছিলেন। বৈদিক দেবতারা অথর্ববেদের যে অংশ গ্রহণ করেছিলেন তাতে প্রমাণিত হয় যে এটি ঋক সংহিতার পরবর্তী যুগের। অথর্ববেদের আধ্যাত্বিক তত্ত্ব ও সৃষ্টিতত্ত্বের ধারণাগুলি পরবর্তী যুগের ইঙ্গিত বহন করে।

প্রাচীন ভারতের বিভিন্ন বিষয়ে জ্ঞান লাভের অমূল্য উৎস হল এই অর্থবেদ। ভূত-প্রেত, দৈত্য-দানব ডাইনি প্রকৃতিতে মানুষের বিশ্বাস থেকে সে যুগে সামাজিক পরিচয় অথর্ববেদ হতে পাওয়া যায়। ধর্মতত্ত্ব এবং নৃতত্ত্বের ইতিহাসের দিক দিয়ে এদের প্রয়োজনীয়তা সর্বাধিক। অথর্ববেদের বিষয়বস্তুর মধ্যে প্রধান আভ‍্যুদায়িক( উন্নতির জন্য যে কাজ) কর্ম হল- আয়ুষ‍্য, ভেষজ‍্য, শান্তিক, পৌষ্ঠিক, সাংমনস‍্য,আভিচারিক, প্রায়শ্চিত‍্য,রাজকর্ম ইত‍্যাদি।

Leave a Reply

%d bloggers like this: