যজুর্বেদ সংহিতা

যজুর্বেদ সংহিতা সম্পর্কে সম্পূর্ণ আলোচনা করা হল।

যজুর্বেদ সংহিতা

সামবেদ সংহিতা যেমন উদগাতার দুটি গ্রন্থ। যজুর্বেদ সংহিতাও তেমনি অধ্বর্য‍্যু প্রার্থনা গ্রন্থ।

মহাভাষ‍্যের পতঞ্জলি ১০১টি শাখার কথা বলেছেন। কিন্তু বর্তমানে আমরা যজুর্বেদ শাখার ৫টি সংহিতা পাই। যথা- i) কঠসংহিতা, ii) কাঠসংহিতা, iii) মৈত্রায়ণী সংহিতা, iv) তৈত্তেরীয় সংহিতা এবং v) বাজসনেয়ী সংহিতা।

যজুর্বেদ আবার কৃষ্ণ বা মিশ্র ও শুক্ল ভেদে দুই প্রকার। প্রথম চারটি সংহিতা কৃষ্ণ যজুর্বেদের শেষেরটি শুক্লযজুর্বেদের অন্তর্গত। শুক্লযজুর্বেদের আবার  দুটি শাখা আছে i) কান্ব ও ii) মাধ‍্যন্দিন।

যে যজুর্বেদ সংহিতায় কেবল শাখার সংগ্রহ তাকে কৃষ্ণযজুর্বেদ বলে।

আর যে যজুর্বেদ সংহিতায় কেবল মন্ত্রের সংগ্রহ তার নাম শুক্লযজুর্বেদ। ঋক, সাম আর ভিন্ন অবশিষ্ট বেদ মন্ত্র গুলি যজুঃ নামে পরিচিত।

তাই যজুঃ মন্ত্রের লক্ষণ প্রসঙ্গে বলা হয়েছে-

” শেষে যজুঃ শব্দঃ।”

যজুর্বেদ আবার অধ্বর্যুবেদ নামে পরিচিত। যিনি যজ্ঞে আহুতি দেন তাকে বলে অধ্বর্যু।

প্রতিটি বৈদিক কর্মে মন্ত্র স্মরণ করতে হয়। এমনই মন্ত্রের সংকলন হলো যজুর্বেদ সংহিতা। যজুর্বেদের পদ্য মন্ত্রগুলি অধিকাংশই ঋকবেদে দেখা যায়। যজুর্বেদের নিজস্ব উপাদান হলো গদ্য মন্ত্র। কৃষ্ণযজুর্বেদের মধ‍্যে তৈত্তিরীয় শাখাটি সবচেয়ে অধিক প্রচারিত। শুক্লযজুর্বেদে বাজসনেয়ী সংহিতার কান্ব ও মাধ্যন্দিন শাখায় ৪০ টি অধ্যায় আছে।

সকল শাখার মধ্যে বিষয়বস্তুর মোটামুটি একটা মিল আছে। যজুঃ সংহিতায় যেসকল যাগের উল্লেখ রয়েছে সেগুলি হল- অগ্নাধান, অগ্নিহোত্র, দর্শপৌর্নমাসযাগ, পশুযাগ, সোমযাগ, বাজপেয়, রাজসূয়, অশ্বমেধ, সৌত্রামনী এবং অগ্নিচয়ন। বাজসনেয়ী সংহিতার শেষ দিকে আছে পুরুষ সূক্ত এবং শিবসংকল্পসূক্ত। যেগুলি গভীর আধ‍্যাত্মিক বোধের পরিচায়ক বিখ‍্যাত ঈশোপনিষদ দিয়ে যজুর্বেদ সংহিতার পরিসমাপ্তি ঘটেছে।

উপনিষদটি সংহিতার অন্তর্গত বলে মন্ত্রোপনিষদ বা সংহিতোপনিষদ বলা হয়। যজুর্বেদে আমরা একপ্রকার একাক্ষর বা অন‍্যান‍্য শব্দ পাই। যেমন- ঔঁ, স্বাহা,স্বধা। এগুলি যজ্ঞানুষ্ঠানে বিশেষ বিশেষ জায়গায় অতিশয় গম্ভীরভাবে উচ্চারিত হয়ে থাকে। এবং পরম পবিত্র বলে বিবেচিত হয়। বহু শতাব্দী পরে তন্ত্রে হ্রীং,শ্রীং,ক্রীং এরূপ রহস‍্যময় বহু অক্ষরের ব‍্যবহার দেখা যায়।


কোন ব্যক্তি যদি ধর্মতত্ত্বের ইতিহাসে প্রার্থনার উৎপত্তি, অগ্রগতি এবং সার্থকতা অনুসন্ধান করতে চান তাহলে তাকে যজুর্বেদ এর সাথে অবশ্যই পরিচিত হতে হবে। ধর্মতত্ত্ব ও দার্শনিক সাহিত্য ভালোভাবে বুঝতে হলে এই সংহিতা অপরিহার্য। যজুর্বেদ ছাড়া আমরা ব্রাহ্মণ সাহিত্য বুঝতে পারি না। আবার ব্রাহ্মণ ছাড়া উপনিষদ বোঝা সম্ভব নয়। তাই নিঃসন্দেহে বলা যায় যে বৈদিক সাহিত্যের উৎপত্তি লাভের জন্য যজুর্বেদ পাঠ অপরিহার্য।

Leave a Reply

%d bloggers like this: