বৃহদারণ্যক উপনিষদ

বৃহদারণ্যক উপনিষদ:-  বৃহদারণ‍্যক উপনিষদ্  শুক্লযজুর্বেদের শতপথ ব্রাহ্মণের অংশ। কোলাহল বর্জিত শান্তরস সম্পদ অরণ্যে উপবিষ্ট বলে এটি আরণ্যক উপনিষদ্।  আয়তনে, ভাবগাম্ভীর্যে এবং গৌরবে অন্যান্য উপনিষদ অপেক্ষা এই উপনিষদ শ্রেষ্ঠ এবং বৃহৎ বলে এর নাম হয়েছে বৃহদারণ্যক উপনিষদ। এই উপনিষদের  নামকরনের যথার্থতা প্রতিপাদন করতে গিয়ে আচার্য শঙ্কর বলেছেন-

” সেয়ং ষড়ধ‍্যায়ী অরণ‍্যে অনুচ‍্যমানত্বাৎ আরণ‍্যকম্ বৃহত্ত্বাৎ পরিমাণতো  বৃহদারণ্যকম্।”

         বৃহদারণ‍্যক উপনিষদ মোট ছয়টি অধ্যায় আছে। প্রতিটি অধ্যায়ে আবার কতকগুলি ব্রাহ্মণাত্মক অংশে বিভক্ত। প্রথম অধ্যায়ে আছে ছয়টি ব্রাহ্মণ, দ্বিতীয় অধ‍্যায়ে ছয়টি, তৃতীয় অধ্যায়ে নয়টি,  চতুর্থ অধ্যায়ে ছয়টি, পঞ্চম অধ্যায়ে পনেরোটি  এবং ষষ্ঠ অধ্যায়ে পাঁচটি ব্রাহ্মণ আছে। এভাবে এই উপনিষদের মোট ব্রাহ্মণের সংখ্যা সাতচল্লিশ।  প্রতিটি ব্রাহ্মণই কতকগুলি মন্ত্রের সমষ্টি। এই উপনিষদ আবার তিনটি কান্ডের সমষ্টি – মধুকান্ড, যাজ্ঞবল্ক‍্যকান্ড এবং খিলকান্ড। প্রথম চারটি অধ্যায়ে বৃহদারণ্যক উপনিষদের মূল বক্তব্য সমাপ্ত হয়েছে। পঞ্চম ও ষষ্ঠ অধ্যায় বিশিষ্ট খিলকাণ্ডটি এই উপনিষদে পরিশিষ্ট। এই অংশে ব্রহ্মজ্ঞান লাভের উপায় রূপে উপাসনার কথা বলা হয়েছে।

      প্রথম ও দ্বিতীয় অধ্যায় নিয়ে মধুকান্ড গঠিত। এখানে শ্রুতি প্রতিপাদিত ব্রহ্মতত্ত্ব আলোচিত হয়েছে। রাজারাই একমাত্র অশ্বমেধ যজ্ঞের অধিকারী হলেও যাঁরা এই যজ্ঞের ফল পেতে চান, তাঁদের জন্য অশ্বমেধ বিজ্ঞানের উপাসনার বিধান দেওয়া হয়েছে।

      মধুকান্ডের দ্বিতীয় অধ্যায়ে ব্রহ্ম ও আত্মার একত্ব প্রতিপাদিত হয়েছে। বলা হয়েছে যে, ব্রহ্মই একমাত্র সত্য, ব্রহ্মাতিরিক্ত কোনো বস্তুর পারমার্থিক সত্তা থাকতে পারে না। দ্বিতীয় অধ্যায়ের চতুর্থ ব্রাহ্মণে

যাগ্যবল্ক‍্য মৈত্রেয়ী সংবাদে প্রতিপালিত হয়েছে যে, আত্মাই একমাত্র সত্য । আত্মাকে জানতে পারলেই সব কিছু জানা যায়। আত্মজ্ঞ ব্যক্তি অমৃতত্ব লাভ করেন। সুতরাং আত্মাই একমাত্র শ্রোতব‍্য, দ্রষ্টব্য, মন্তব্য এবং ধ‍্যেয়- “আত্মা বা অরে দ্রষ্টব‍্যঃ শ্রোতব‍্যো মন্তব‍্যো নিদিধ‍্যাসিতব‍্যঃ।।

            তৃতীয় ও চতুর্থ অধ্যায় নিয়ে বৃহদারণ্যক উপনিষদের যাগ্যবল্ক‍্যকাণ্ড গঠিত। এই কাণ্ডটি মূলতঃ  বিচার প্রধান। মধুকান্ডের উপদিষ্ট বিষয়ে – এখানে পক্ষ ও প্রতিপক্ষের যুক্তির মাধ্যমে, আচার্য ও  শিষ‍্যের কথোপকথনের মাধ্যমে দৃঢ় ভিত্তির উপর প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। কর্মফল সংসারাতীত নয়, সন্ন্যাসসহ আত্মজ্ঞানের মাধ্যমে সাংসারিক যাবতীয় বন্ধন থেকে মুক্ত হওয়া যায়, অক্ষর ব্রহ্মের স্বরূপ প্রভৃতি উপদিষ্ট হয়েছে।

Leave a Reply

%d bloggers like this: