শুল্বসূত্র

শুল্বসূত্র:-  বহু ধারায় বিস্তৃত বৈদিক সাহিত্যের সূত্র সাহিত্য বিশেষ উল্লেখযোগ্য।  সূত্র সাহিত্য মূলত বেদের ব্রাহ্মণভাগেরই  প্রতিনিধি। ব্রাহ্মণভাগ হল বেদের কর্মকাণ্ড।  এখানে বর্ণিত হয়েছে যাগযজ্ঞাদির বিস্তৃত বিবরণ। 

তাছাড়া ব্রাহ্মণের মধ্যে নিহিত আছে বিভিন্ন প্রাচীন গাথা ও আখ্যায়িকা, ব‍্যাকরণ ও শব্দতত্ত্বের আলোচনা, আধ্যাত্মিক ও দার্শনিক তত্ত্বের পূর্বাভাস। এই ব্যাপক ও বিস্তৃত আলোচনাকে সরল ও সংক্ষিপ্ত করে যজ্ঞপ্রণালীকে সহজবোধ্য করার জন্যই সূত্র সাহিত্যের উদ্ভব। বস্তুত সূত্র সাহিত্য হল যজ্ঞবিষয়ক আচরনবিধির সুসম্পূর্ণ সংক্ষিপ্ত সংকলন।

           সূত্র সাহিত্যের চতুর্থ ভাগের নাম শুল্বসূত্র। এগুলি শ্রৌতসূত্রের  সঙ্গে ঘনিষ্ঠভাবে সম্পর্কযুক্ত। যজ্ঞবেদীর পরিমাপকালে যে মাপক সূত্র ব্যবহৃত হত তার নাম শুল্ব।  বিভিন্ন যজ্ঞানুষ্ঠানের জন্য ভূমির পরিমাপ, বিভিন্ন আয়তনের যজ্ঞবেদী নির্মাণ, বৃত্ত, অর্ধবৃত্ত, ত্রিকোন, চতুষ্কোন,  আয়তক্ষেত্র, বর্গক্ষেত্র প্রভৃতি নানান আকার নিষ্কারন প্রভৃতি শুল্বসূত্রের প্রতিপাদ্য বিষয়।  এককথায় প্রাচীন ভারতীয় ঋষিদের জ্যামিতি বিষয়ক জ্ঞান নিহিত আছে। বেদের শুল্বসূত্রে। 

বিভিন্ন বেদের সঙ্গে সম্বন্ধ একাধিক শুল্বসূত্র আছে। সেগুলির মধ্যে কাত‍্যায়ন শুল্বসূত্র,  আপস্তম্ব শুল্বসূত্র, ব‍ৌধায়ন শুল্বসূত্রের নাম বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য। কৃষ্ণযজুর্বেদ শ্রৌত, গৃহ‍্য, ধর্ম এবং শুল্বসূত্র সমন্বিত কল্পসূত্র সমূহের উল্লেখ পাওয়া যায়। আপস্তম্ব ধর্মসূত্রের সঙ্গে ভরদ্বাজ ও হিরণ‍্যকেশি ধর্মসূত্রের ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক পরিলক্ষিত হয়। এই সমস্ত সূত্রের সঙ্গে তৈত্তিরীয় সংহিতার অন্তর্গত বাধূল ও বৈখানস  সূত্রসমূহ মিলিত হয়ে সূত্রসাহিত‍্যকে আরও বিস্তৃতি দান করেছে।

Leave a Reply