আরণ‍্যক

আরণ‍্যক:- পাণিনী ‘অরণ‍্যে বসবাসকারী’ অর্থে আরণ্যক শব্দটি ব্যবহার করলেও কাত্যায়ন অরণ্যে রচিত গ্রন্থ অর্থে এই শব্দটি ব্যবহার করেছেন। সায়ণভাষ‍্যেও এই অর্থেই শব্দটির ব‍্যবহার পাই-

‘ অরণ‍্যেব পাঠ‍্যত্বাত্ আরণ‍্যকম্ ইত‍্যর্থতে।’

কেউ কেউ অরণ্য শব্দের অর্থ ব্রহ্ম বলেছেন। সেই ব্রহ্ম সম্পর্কিত জ্ঞান যা গুরু শিষ্যকে অরণ্যে সঙ্গমনে  দান করতেন তাই হল অারণ্যক। প্রাচীন বেদবিদ মনীষীগণ বলেছেন-

‘মন্ত্রব্রাহ্মণয়োর্বেদনামধেয়ম্।’

অর্থাৎ মন্ত্র ও ব্রাহ্মণ এই দুটি অংশের নাম বেদ। বৈদিক সংহিতার প্রথম স্তর মন্ত্র, এখানে দেব-দেবী স্তুতি ও প্রার্থনা প্রধান। দ্বিতীয় স্তর ব্রাহ্মণ- যাগযজ্ঞই যেখানে প্রধান ভাবে আলোচিত। এবং তৃতীয় বা শেষ স্তরে আরণ‍্যক ও উপনিষদই মুখ্য। আরণ্যক কর্মের সাংকেতিক ও আধ্যাত্মিক ব্যাখ্যা এবং উপনিষদ কর্মহীন বিশুদ্ধ জ্ঞানের প্রকাশ। 

বেদের দুটি কাণ্ড। যথা কর্মকাণ্ড ও জ্ঞানকাণ্ড।  উপনিষদ সম্পূর্ণরূপে জ্ঞানকাণ্ডের অন্তর্ভূক্ত। এবং ব্রাহ্মণে সম্পূর্ণ রূপে কর্মকাণ্ডই আলোচিত।  আর আরন্যক কর্মকাণ্ড ও জ্ঞানকাণ্ডের মাঝামাঝি স্তরের রচনা।

যজ্ঞের তাৎপর্য, যজ্ঞসমুহের রহস‍্যময়তা এবং বিভিন্ন দার্শনিক তত্ত্বের আলোচনা আরন্যকের প্রতিপাদ্য বিষয়। বস্তুত বেদের ক্রিয়াবহুল যাগযজ্ঞ আরণ্যকে এসে জ্ঞানযজ্ঞে রূপান্তরিত হয়েছে। লোকালয় থেকে দূরে অরণ‍্যের নির্জন পরিবেশে ব্রহ্মজিজ্ঞাসু শিক্ষার্থী স্তরের কাছে বসেই এই আরণ‍্যক বিদ‍্যাগ্রহণ করতেন। এক কথায় আরণ‍্যক হল ব‍্যায়বহুল দ্রব‍্য যজ্ঞের পরিপূরক।

আরণ‍্যকগুলি চুর্ণক জাতীয় গদ‍্যভাষায় রচিত। আরণ‍্যকের ভাষা ব্রাহ্মণের ভাষার মতোই অতি প্রাচীন। ছোট ছোট বাক‍্যে ভাবপ্রকাশ আরণ‍্যকের রচনাশৈলীর বৈশিষ্ট‍্য। আরণ‍্যকগুলি গদ‍্যে রচিত। এদের ভাষা দুর্বোধ‍্য না হলেও এদের সাংকেতিকতার জন‍্য অন্তর্নিহিত অর্থ বোঝা সবক্ষেত্রে সহজ নয়। তা সত্ত্বেও বৈদিক  সাহিত‍্যের ইতিহাসে তথা ইদানীং সমাজ জীবনে এর গুরুত্ব অপরিসীম।

Leave a Reply

%d bloggers like this: