google.com, pub-4851514572944618, DIRECT, f08c47fec0942fa0

কঠোপনিষদ

কঠোপনিষদ:- কঠোপনিষদ কৃষ্ণযজুর্বেদ সংহিতার অন্তর্গত। কৃষ্ণ যজুর্বেদে কঠ নামক ঋষি দৃষ্ট সংহিতা এবং কঠ নামে এটি ব্রাহ্মণ গ্রন্থও আছে।  তবে অনেকের মতে এটি কঠ ব্রাহ্মণের অন্তর্ভুক্ত এবং সেই কারণে এই উপনিষদ খানি কঠোপনিষদ নামে অভিহিত। আচার্য শংকরের মতে বিন্যাস অনুসারে দুটি অধ্যায় এবং প্রতিটি অধ্যায় তিনটি করে বল্লেই  বা খন্ডে বিভক্ত। যম ও নচিকেতার কথোপকথনের মাধ্যমে এখানে ব্রহ্মতত্ত্ব আলোচিত হয়েছে বলে গ্রন্থটি সর্বাধিক হৃদয়গ্রাহী হয়ে উঠেছে। এছাড়াও ঋকবেদের দশম মন্ডল এর ১৩৫ নম্বর সূক্তে অনুরূপ একটি উপাখ্যান দৃষ্ট হয়। এই উপনিষদের অনেক ভাব ও ভাষা ‘শ্রীমদ্ভাগবতগীতা’-য় হুবহু গৃহীত হয়েছে।

কঠোপনিষদের মূল আলোচ্য বিষয় ব্রহ্মতত্ত্ব। বাজশ্রবার পুত্র নচিকেতা।  বাজশ্রবা প্রতিজ্ঞামত ঋষিদের গোদান করতে উদ্যত হন –

‘ পিতোদকা জগ্ধাতৃণা দুগ্ধদোহা নিরিন্দ্রিয়াঃ।’ 

    এরূপ নিকৃষ্ট দান দেখে বালক নচিকেতা পিতাকে বলল-

‘ কস্মৈ মাং দাস‍্যমীতি।’

সে বারবার প্রশ্ন করায় বাজশ্রবা বললেন-

    ‘মৃত‍্যুবে ত্বা দদামীতি।’

অর্থাৎ তোকে যমকে দান করলাম। বালক নচিকেতা যমের কাছে গিয়ে যমকে পরমতত্ত্বের কথা জিজ্ঞাসা করলে যম তাকে ধন, জন, ঐশ্বর্য,  আয়ু বিষয়ে ইচ্ছামত প্রার্থনা করতে বলল-

‘ যে যে কামাদুর্লভা মর্ত‍্যলোকে সর্বান কামাংশ্ছন্দতঃ প্রার্থয়স্ব।।”

       নচিকেতার দৃঢ় সংকল্পে সম পরাভূত হয়ে যম তাকে ব্রহ্মবিদ্যার উপদেশ দেন। এখানে নচিকেতার সংযম ও বৈরাগ্যযোগ‍্য  মতিও আদর্শ স্থানীয়। দ্বিতীয় থেকে চতুর্থ বল্লীতে আলোচিত হয়েছে নচিকেতার জ্ঞানপিপাসার প্রশংসা, চিত্রশুদ্ধির প্রয়োজনীয়তা, আত্মার একাত্মতা। পঞ্চম ও ষষ্ঠ বল্লীতে পরম আত্মার স্বরূপতত্ত্ব ও সর্ব ব্যাপীত্ব,  আত্মানাত্ন বিবেক ও যোগ বিধি  বর্ণিত হয়েছে।

   
প্রাচীন ভারতবর্ষের শিশুও যে ব্রহ্মজ্ঞানকেই জীবনের শ্রেষ্ঠ কাম্যবস্তু বলে বিবেচনা করত, নচিকেতা উপাখ্যান তারই উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত। তত্ত্বজিজ্ঞাসা বালক নচিকেতাকে যমরাজ আত্মতত্ত্ব ও আত্মলাভের উপায় বিবৃত করে বললেন-

” উত্তিষ্ঠত জাগ্রতপ্রাপ‍্য বরান্নিবোধত
ক্ষুরস‍্যধারা নিশিতা দুরত‍্যয়া
দুর্গ‍্যং পথস্ত‍্য কবয়ো বদন্তি।।”

    উঠ, জাগো বরণীয় আচার্যগণের নিকট পরমাত্মাকে জানো। ক্রান্তদর্শী কবিগণ তত্ত্বজ্ঞানের এই পথকে ক্ষুরধার দূরতিক্রমনীয় বলেছেন।

Leave a Reply

%d bloggers like this: