রামায়ণ ও মহাভারতের পৌর্বাপর্য

রামায়ণ ও মহাভারতের পৌর্বাপর্য সম্পর্কে আলোচনা করা হল । যদি কোন রামায়ণ ও মহাভারতের পৌর্বাপর্য সম্পর্কে তথ্য বাদ থাকে তা হলে নিচে লিখুন ।

এখানে রামায়ণ ও মহাভারতের পৌর্বাপর্য বলতে বুঝি রামায়ণ ও মহাভারতের মধ্যে কোন্‌টি পূর্বে রচিত হয়েছিল। নিম্নে বিভিন্ন মতবাদ বা আলোচনা তুলে ধরা হল ।

রামায়ণ ও মহাভারতের পৌর্বাপর্য :

রামায়ণ ও মহাভারতের মধ্যে কোন্‌টি পূর্বে রচিত হয়েছিল এ বিষয়ে পণ্ডিতেরা নানা অনুমান করেছেন। সেই অনুমান গুলি আলোচনা করলে সহজেই রামায়ণ ও মহাভারতের পৌর্বাপর্য নির্ণয় করা যাবে ।

আদিকবি আখ্যা

বাল্মীকি আদিকবি রামায়ণ আদি কাব্য রূপে অভিহিত। বিষ্ণুর দশ অবতারের মধ্যে অবতার হিসাবেও কৃষ্ণ অবতারের পূর্বেই রাম অবতার। এই দিক দিয়ে রামায়ণকেই মহাভারতের পূর্ববর্তী বলে হিন্দুরা স্বীকার করেন।

পাশ্চাত্য পণ্ডিতদের মত

জ্যাকোবির মতে রামায়ণ মহাভারতের পূর্ববর্তী এবং তাঁর মতে রামায়ণের দ্বারা প্রভাবিত হওয়ার ফলেই মহাভারত মহাকাব্যরূপে স্বীকৃতি লাভ করে। ভিন্টারনিৎস এই মতের বিশেষ বিরোধিতা করেন। তাঁর মতে মহাভারতের বর্ণনাভঙ্গি যেমন ‘যুধিষ্ঠির উবাচ’, ‘সঞ্জয় উবাচ’ এই রীতিতে প্রাচীনত্বের সুস্পষ্ট ছাপ আছে; তেমন ভাবে রামায়ণে কোথাও এইভাবে চরিত্রগুলি। বক্তব্য উপস্থাপিত হয়নি। অর্থাৎ এই কাব্যরীতিটি প্রাচীন তাই মূল মহাভারত রামায়ণের পূর্ববর্তী ভিন্টারনিৎসের মতে।

রামোপাখ্যান

রামায়ণ যে মহাভারতের পূর্ববর্তী সে-বিষয়ে অনুমানের উপর নির্ভর করে ই যুক্তিগুলি দেখান হয়—মহাভারতের বনপর্ব, দ্রোণপর্ব ও শান্তিপর্বে এবং হরিবংশে রামোপাখ্যানের সংক্ষেপে উল্লেখ আছে। এছাড়া রামায়ণের ঘটনাগুলির মধ্যে এক অলৌকিক ভাব দেখা যায়। কিন্তু মহাভারতের সমস্ত চরিত্রগুলিই সম্পূর্ণরূপে মানুষী প্রকৃতির। সংযত উদ্দাম কল্পনা বা অতিশয়োক্তির অবকাশ নেই। এর থেকে বলা যেতে পারে যে রামায়ণ মহাভারতের পূর্ববর্তী।

সিদ্ধান্ত

পরিশেষে বলা যেতে পারে যে, যে আকারে মহাকাব্য দুটি বর্তমানে পাওয়া গিয়েছে। সেই আকারে রামায়ণ অবশ্যই মহাভারতের পূর্বকালীন। দুটি মহাকাব্যের ক্ষেত্রেই যুগে যুগে বিভিন্ন ধরনের রচনা অনুপ্রবিষ্ট হয়েছে এবং নূতন নূতন উপাখ্যান, নীতিকথা, উপদেশ ইত্যাদি গ্রথিত হয়েছে। তবুও আয়তনের দিক থেকে যখন রামায়ণ মহাভারতের চেয়ে অনেক ছোট তখন অনুমান করা যেতে পারে যে মহাভারত তার শেষরূপ গ্রহণ করার আগেই রামায়ণ তার পূর্ণাঙ্গরূপ গ্রহণ সমাপ্ত করেছিল। এর থেকে সিদ্ধান্ত করা যায় যে মূল রামায়ণ মূল মহাভারতের পূর্ববর্তী। দুটি মহাকাব্যের রচনা অনেকদিন ধরেই পাশাপাশি চলেছিল এবং মহাভারতের সুদীর্ঘ রচনাকাল শেষ হওয়ার আগেই রামায়ণের বর্তমান আকার সম্পূর্ণ হয়ে গিয়েছিল।

অর্থাৎ রামায়ণ বর্তমান আয়তন গ্রহণ করার পরও অনেকদিন ধরেই মহাভারতের রচনা চলেছিল। ভিন্টারনিৎসের মতে বর্তমান রামায়ণ দ্বিতীয় খ্রিস্টাব্দেই সম্পূর্ণ হয়ে গিয়েছিল এবং সম্ভবত মূল রামায়ণ তারও পাঁচশত বৎসর পূর্বে খ্রিঃ পূর্ব তৃতীয় শতকে বাল্মীকি কর্তৃক রচিত হয়।

Leave a Reply

%d bloggers like this: