রামায়ণের রচনাকাল

রামায়ণের রচনাকাল সম্পর্কে আলোচনা করা হল । যদি কোন রামায়ণের রচনাকাল সম্পর্কে তথ্য বাদ থাকে তা হলে নিচে লিখুন ।

রামায়ণের রচনাকাল

সংস্কৃত সাহিত্যের ইতিহাসে মহাকাব্য, নাটক, গদ্য ইত্যাদি রচনাকারের রচনাকাল নির্ণয় এক দুরূহ সমস্যা। এর কারণ সম্ভবত ভারতীয় লেখকদের ঐহিক জগত সম্বন্ধে উদাসীনতা। সংস্কৃত যে-কোনও গ্রন্থেরই রচনাকাল নির্ধারণ করতে হলে অনুমান নির্ভর যুক্তিপরম্পরার উপর নির্ভর করতে হয়। রামায়ণের ক্ষেত্রেও এই কথা প্রযোজ্য। বর্তমানে রামায়ণ যে আকারে পাওয়া যায় তার মধ্যে কিছু অংশ প্রাচীন ও কিছু অংশ নবীন বলে মনে হয়।

রামায়ণের রচনাকাল নিয়ে পণ্ডিতদের মধ্যে মতভেদ পরিলক্ষিত হয়। পণ্ডিত জ্যাকোবি ও ম্যাকডোনেলের মতে বুদ্ধ আবির্ভাবের অনেক আগে ৮০০ থেকে ৫০০খ্রিস্টপূর্বাব্দের মধ্যে রামায়ণ রচিত হয়েছিল। ভিন্তারনিৎস ও বুলক মনে করেন যে খ্রিস্টপূর্ব তুষ শতকে রামায়ণ রচিত হয়েছিল। পণ্ডিত ওয়েবার জ্যাকোবির মতকেই সমর্থন করেছেন। রামায়ণের রচনাকাল নির্ধারণে নিম্নলিখিত যুক্তিগুলি উল্লেখ করা যেতে পারে।


(১) অনেকের মতে নিঃসন্দেহে রামায়ণের মূল অংশ মহাভারতের পূর্বেই রচিত হয়েছিল। রামায়ণের রচয়িতা বাল্মীকির ‘আদিকবি’ আখ্যা দ্বারা এই মত সমর্থিত হয়। রামায়ণ ও মহাভারতের পৌবাপর্য বিচার করলে দেখা যায় মহাভারতের বহুস্থানে রামায়ণের উপাখ্যানগুলি উল্লিখিত হয়েছে কিন্তু রামায়ণের কোনও স্থানেই মহাভারতের উল্লেখ নেই। অতএব মহাভারত রচনার পূর্বেই রামায়ণ রচিত হয়েছিল একথা অনুমিত হয়।

(২) বৌদ্ধ জাতক কাহিনি গুলির দ্বারা এইটি প্রমাণিত হয় যে বৌদ্ধধর্মের আবির্ভাবের পূর্বেই রামায়ণ রচিত হয়েছিল। রামায়ণের যুদ্ধকাণ্ডের একটি শ্লোক পালিজাতকে অবিকল উদ্ধৃত হয়েছে।


(৩) রামায়ণে যবন শব্দটি দু’বার ব্যবহৃত হয়েছে। যবন শব্দটি উত্তর-পশ্চিম ভারতে একসময় যত বৈদেশিক জাতি আক্রমণ করেছিল তাদের সকলকেই বোঝায়, শুধু গ্রীকদের নয়। অতএব বলা যায় যে, রামায়ণ গ্রীক আক্রমণের পূর্বেই রচিত হয়েছিল।


(৪) মেগাস্থিনিসের বিবরণ থেকে জানা যায় যে খ্রিস্টপূর্ব চতুর্থ শতকে পাটলিপুত্র নগরী নির্মিত হয় এবং খ্রিস্টপূর্ব তিনশত পঞাশ (৩৫০ খ্রিঃ পূঃ) শতকে এটি এক বিশাল সাম্রাজ্যের রাজধানীতে পরিণত হয়। কিন্তু রামায়ণে এই প্রসিদ্ধ নগরীর কোনও উল্লেখ নেই। এ থেকে অনুমান করা যায় যে পাটলিপুত্র নগরী প্রতিষ্ঠার পূবেই রামায়ণ রচিত হয়েছিল।

(৫) রামায়ণে কোশলের রাজধানীর নাম অযোধ্যা, বৌদ্ধ ও জৈনযুগে এর নাম ছিল সাকেত। সুতরাং রামায়ণের রচনাকাল বৌদ্ধযুগের পূর্বে বলা যেতে পারে। রামায়ণে মিথিলা ও বিশালা নামে দুটি পৃথক নগরী ছিল ; বুদ্ধদেবের সময়ে দুটি নগরী মিলিত হয়ে বৈশালী নামে একই শাসনতন্ত্রের অধীনে এসেছিল। এটিও রামায়ণ বৌদ্ধযুগের পূর্বে রচিত এই মতকে সমর্থন করে।

(৬) রামায়ণের ভাষা সর্বাংশে পাণিনীয় ব্যাকরণ সম্মত নয়, সুতরাং বাল্মীকি পাণিনির (খ্রিঃ পূর্ব ৪র্থ শতক) পূর্ববর্তী বলা যেতে পারে।


(৭) খ্রিস্টিয় প্রথম শতকের জৈন কবি বিমল সূরীর প্রাকৃত কাব্যে রামোপাখ্যান থাকায় অনুমিত হয় যে খ্রিস্টিয় প্রথম শতাব্দীর পূর্বেই রামায়ণ রচনা সম্পূর্ণ হয়েছিল এবং প্রসিদ্ধও হয়েছিল। চৈনিক গ্রন্থ থেকে জানা যায় যে খ্রিস্টিয় চতুর্থ শতকে বৌদ্ধ দার্শনিক সুবন্ধুর সময় বৌদ্ধদের কাছে রামায়ণ পরিচিত ছিল।


উপরোক্ত তথ্যের ভিত্তিতে সাধারণভাবে অনুমান করা যায় যে খ্রিঃ পূর্ব ষষ্ঠ শতকের পূর্বে বাল্মীকির মূল গ্রন্থ রচিত হয়েছিল এবং সম্ভবত খ্রিঃ পূর্ব দ্বিতীয় শতকের পূর্বেই মূল রামায়ণ বর্তমান রূপ পরিগ্রহ করেছিল।

  • আরো পড়ুন

রামায়ণ কোন সময় রচিত হয়েছিল ?

খ্রিঃ পূর্ব ষষ্ঠ শতকের পূর্বে বাল্মীকির মূল গ্রন্থ রচিত হয়েছিল

রামায়ণের রচয়িতা কে

বাল্মীকি

Leave a Reply