কেনোপনিষদ:- উপনিষদ সংস্কৃত সাহিত্যের উল্লেখযোগ্য ফসল। উপনিষদ গুলির মধ্যে কেনোপনিষদ অন্যতম। সামবেদের জৈমিণীয় বা তলবকার ব্রাহ্মণে ৮টি অধ্যায় আছে, তার মধ্যে চতুর্থ থেকে সপ্তম অধ্যায় পর্যন্ত অংশটির নাম উপনিষদ ব্রাহ্মণ, এটি আরণ্যকধর্মী রচনা। সপ্তম অধ্যায়ের অষ্টাদশ থেকে একবিংশ খন্ড পর্যন্ত অংশটি কেনোপনিষদ নামে পরিচিত। তাই উপনিষদের প্রথম মন্ত্র-
‘ কেনেষিতং পততি প্রেষিতং মনঃ।’
এই উপনিষদের প্রথম দুটি খন্ড পদ্যে রচিত বলে অনেকে সমস্ত উপনিষদটিকে অপেক্ষাকৃত অর্বাচীন বলতে চান, কিন্তু সে কথা সত্য নয়।
এই উপনিষদের প্রথম দুটি খন্ডের বক্তব্য হল- বাক্, চক্ষু, শ্রোত্র, মন এবং প্রাণ দিয়ে ব্রহ্মাকে পাওয়া যায় না, বরং তারাই ব্রহ্মের দ্বারা প্রকাশিত হয়। বস্তুত ব্রহ্মা জানা অজানার বাইরে।
তৃতীয় ও চতুর্থ খন্ডে আছে উমা ও হৈমবতীর উপাখ্যান। যার কাছ থেকে ইন্দ্র ব্রহ্মের রহস্য জেনেছিলেন। এই উমা শিবপত্নী কুমার জননী নন। শঙ্করাচার্য কেনোপনিষদের উমাকে সংজ্ঞা শব্দ বলে অভিহিত করেছেন। শঙ্করের মতে হৈমবতী শব্দের অর্থ হল একবার অলংকার ভূষিতা ও অন্যবার হিমবানের পুত্রী। বস্তুত ঐন্দ্রী চেতনার মহাকাশে যে স্ত্রীমূর্তিকে আমরা পাই- শঙ্করের মতে তিনিই হিরন্ময়ী, হৈমবতী। আবার কেনোপনিষদের যে স্ত্রী মূর্তিকে পাই তিনি শঙ্করের মতে ব্রহ্মবিদ্যারূপিনী। ঋকসংহিতার তিনি বাক্ সবার কাছে তিনি সুলভদর্শন নন। একমাত্র ব্রহ্মজিজ্ঞাসুর কাছে সুবাসা জায়ার মত তিনি তাঁর দেহখানি মেলে ধরেন।
কেনোপনিষদের হৈমবতী উমা আখ্যানে এই নিগূঢ় তত্ত্বই প্রকাশিত হয়েছে যে ব্রহ্মই একমাত্র শক্তি। ব্রহ্মছাড়া বিশ্বের সমস্ত কিছুই শক্তিহীন জড়বত্। এ প্রসঙ্গে বলা হয়েছে- বিদ্যুতের ঝলক যেমন দেখা দিয়ে মিলিয়ে যায় ব্রহ্মাও সেরূপ। সাধকের মন তাকে ছুঁই ছুঁই করে, স্মৃতি তাকে ধরে রাখতে চায়।
অবশেষে সংকল্প দিয়ে তাকে ধরে রাখে। সেই ব্রহ্ম এখানে ‘ তদ্ ধনম্’ রূপে উল্লিখিত।