শতপথ ব্রাহ্মণ

শতপথ ব্রাহ্মণ:- ব্রাহ্মণ সাহিত‍্যের মধ্যে দীর্ঘতম ও সর্বাধিক গুরুত্বপূর্ণ রচনা শতপথ ব্রাহ্মণ। এই ব্রাহ্মণটি শুক্লযজুর্বেদের বাজসনেয়ী সংহিতার অন্তর্গত। শতপথ ব্রাহ্মণের  দুটি শাখা- কান্ব ও মাধ‍্যন্দিন। এই দুটি শাখার মধ্যে মাধ্যন্দিন শাখারই প্রাধান‍্য ও প্রচলন বেশি। এই শাখা থেকেই আলোচ‍্য ব্রাহ্মণের নামকরণে শতপথ শব্দটি ব্যবহৃত হয়েছে। কারণ এই শাখাতেই ১০০ টি অধ্যায় আছে। মাধ্যমিক শাখার শতপথ ব্রাহ্মণে সর্বমোট ১৪ টি কান্ড, ১০০ টি অধ্যায়, ৬৮ টি প্রপাঠক,  ৪৩৮ টি ব্রাহ্মণ এবং ৭৬২৪ টি কন্ডিকা আছে।

মাধ‍্যন্দিন শাখার শতপথ ব্রাহ্মণের

  • i) প্রথম কান্ডে-দশপূর্ণমাসেষ্টি,
  • ii) দ্বিতীয় কান্ডে অগ্নিহোত্র পিন্ডপিতৃযজ্ঞ, চাতুমাস‍্য ও নবান্ন নামক ইষ্টি,
  • iii-iv) তৃতীয় ও চতুর্থ কান্ডে -সোমযাগের দীক্ষা, যজ্ঞবেদী নির্মান, সোমরস নিষ্কাষণ প্রভৃতির আলচনা আছে।
  • v) পঞ্চম কান্ডের বিষয়বস্তু হল – রাজসূয় ও বাজপেয় নামক দুটি গুরুত্বপূর্ণ যাগের বিবরণ।
  • vi-x) ষষ্ঠ থেকে দশম এই পাঁচটি কান্ডে আমরা অগ্নিচয়ণ, যজ্ঞবেদীর আধ‍্যাত্মিক ও প্রতীক ব‍্যাখ‍্যার বিবরণ পাই।
  • xi-xii) একাদশ ও দ্বাদশ কান্ডে আছে পশু বন্ধযাগ ও  পঞ্চমহাযজ্ঞের বিবরণ, দ্বাদশাহ যাগ, সংবৎসরসত্র এবং সৌত্রামণি নামক প্রায়শ্চিত্তের যাগের উল্লেখ আছে।
  • xiii) ত্রয়োদশ কান্ডে আছে – অশ্বমেধ, পুরুষমেধ, সর্বমেধ, পিতৃমেধ যাগের বিবরণ।
  • xiv) চতুর্দশ কান্ডে রয়েছে বৃহদ্ আরণ‍্যকের বীজ। অধ‍্যাপিকা সুকুমারী ভট্রাচার্যের মতে মাধ‍্যন্দিন শাখার ষষ্ঠ থেকে নবম অধ‍্যায় পর্যন্ত অংশের প্রবক্তা শান্ডিল‍্য এবং অবশিষ্ট অংশের প্রবক্তা যাজ্ঞবল্ক।

      
শতপথ ব্রাহ্মণ প্রাচীন ভারতীয় ইতিহাস, সমাজ, অর্থনীতি ও রাজনীতির এক সুমহান আকর গ্রন্থ। পঞ্চম কান্ডের রাজসূয় যজ্ঞের বিবরণ প্রসঙ্গে প্রাচীন ভারতের রাজনীতি বিষয়ে অনেক তথ্য পাওয়া যায়। মন্ত্রী পরিষদ, ব্রাহ্মণ পুরোহিতের ক্ষমতা, রাজা নির্বাচনে ও রাজ‍্যাভিষেক প্রজাদের অবদানও করনীয়,  রাজা-প্রচার সম্বন্ধ প্রভৃতি মূল্যবান তথ্য এখানে লিপিবদ্ধ আছে।  এই ব্রাহ্মণে অনেক রকমের বৃত্তির উল্লেখ আছে। তা থেকে সেকালের সামাজিক স্তরবিন্যাসের পরিচয় মেলে। বস্তুত  বৈদিক সাহিত্যে গুরুত্বের দিক থেকে ঋকবেদ সংহিতার পরেই শতপথ  ব্রাহ্মণের স্থান।

Leave a Reply

%d bloggers like this: